অর্ধপরিবাহী পদার্থ বা সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে এই মেমোরি তৈরি হয়। চৌম্বক কোরের তুলনায় অর্ধপরিবাহী মেমোরি অনেক ছোট ও সস্তা। যে কোনো মেমোরি সেলের ডেটা Read/Write এর সময় সমান তাই এই মেমোরিকে র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি বা র্যাম (Randome Access Memory - RAM) বলে। এই মেমোরির অভ্যন্তরে অসংখ্য মেমোরি সেল থাকে।
র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি বা র্যামকে প্রধানতঃ দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক. রিড-রাইট মেমোরি (Read- Write Memory ) ও
খ. রিড অনলি মেমোরি বা রম (Read Only Memory - ROM)
ক. রিড রাইট (Read-Write) মেমোরি
কম্পিউটার ব্যবহারকারী রিড রাইট মেমোরিতে ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। এবং রক্ষিত ডেটা মুছে পুনরায় নতুন ডেটা রাখতে পারেন। এই মেমোরিকে ইংরেজিতে সাধারণত র্যাম (RAM) বা র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি (Random Access Memory) বলে। র্যাম (RAM) কথাটি আসলে সঠিক নয় কারণ রমের (ROM) অ্যাকসেসও র্যানডম। রিড রাইট মেমোরি একটি উদ্বায়ী মেমোরি অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে মেমোরিতে রক্ষিত ডেটা মুছে যায়। বৈশিষ্ট্যের প্রকারভেদে কয়েক ধরনের র্যাম (RAM) মেমোরি বর্তমানে প্রচলিত আছে। অপারেটিং মোড অনুসারে র্যামকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. ডাইনামিক র্যাম (Dynamic RAM) বা ডির্যাম (DRAM)
২. স্ট্যাটিক র্যাম (Static RAM) বা এসর্যাম (SRAM)
চৌম্বক কোর মেমোরির সাথে র্যাম মেমোরির প্রধান পার্থক্য হচ্ছে বিদ্যুৎ চলে গেলেও চৌম্বক কোর মেমোরি থেকে ডেটা মুছে যায় না। কিন্তু র্যাম মেমোরি থেকে ডেটা বা উপাত্ত মুছে যায় ।
১. ডাইনামিক র্যাম (Dynamic RAM DRAM) বা ডির্যাম
ডাইনামিক র্যাম (Dynamic RAM)-এ বাইনারি বিট (0, 1 ) বৈদ্যুতিক চার্জ আকারে ক্যাপাসিটরে (Capacitor) জমা থাকে। ডাইনামিক র্যাম চিপের মধ্যে মস ট্রানজিস্টর (MOS Transistor) দ্বারা ক্যাপাসিটর (Capacitor) তৈরি করা হয়। ক্যাপাসিটরে ধারণকৃত চার্জগুলো সময় বাড়ার সাথে সাথে ডিসচার্জ (Discharge) হওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই নির্ধারিত সময় পর পর ডায়নামিক মেমোরি রিফ্রেশিং এর মাধ্যমে রিচার্জ (Recharge) করতে হয়। ডায়নামিক র্যামে শক্তির অপচয় কম হয় ।
• সিনক্রোনাস ডির্যাম
• অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম
সিনক্রোনাস ডির্যাম বা এসডির্যাম (Synchronous Dynamic RAM or SDRAM)
সিনক্রোনাস ডির্যাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাড্রেস নির্ণয় করে। এবং ডেটা রিড/রাইট সংশ্লিষ্ট নানাবিধ প্রক্রিয়ার মাঝে অভ্যন্তরীণভাবে সমন্বয় করতে সক্ষম। সিনক্রোনাস ডির্যাম নিজেকে কম্পিউটারে ব্যবহৃত সিস্টেম ক্লকের সঙ্গে সিনক্রোনাইজ (সমকালবর্তী) করে এবং ক্লক পালসের ধারা অনুযায়ী কাজ করে। এ ধরনের ডির্যাম মেমোরি থেকে প্রথম বিট রিড (Read) পর বহিঃস্থ সার্কিটের মাধ্যমে নতুন করে অ্যাড্রেস নিরূপণের প্রয়োজন পড়ে না। ডেটা রিড/রাইট (Read/Write) করার সময় মেমোরি সেলের অ্যাড্রেস নিরূপণের আনুষঙ্গিক খরচ কম এছাড়াও সিনক্রোনাস ডির্যামের গতি অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম থেকে বেশি হয়ে থাকে। এ কারণে সব ধরনের ডির্যামের মাঝে সিনক্রোনাস ডির্যাম হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুতগতির।
অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম
কম্পিউটারে যখন ইনপুটে সিগন্যাল প্রদান করা হয়, তখন অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম ক্রিয়াশীল হয়। অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
1. ফাস্ট পেইজ (Fast Page )
2. ইডিও (EDO: Extended Data Output)
3. বিইডিও ( BEDO. Burst Extended Data Output)
২. স্ট্যাটিক র্যাম (Static RAM or SRAM) বা এসর্যাম
স্ট্যাটিক র্যাম (Static RAM) ফ্লিপ ফ্লপ দ্বারা গঠিত। এটি বাইনারি বিট (0, 1 ) ধারণ করে। এই ধারণকৃত ডেটা ততক্ষণ পর্যন্ত মেমোরিতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে মেমোরিতে রক্ষিত ডেটা মুছে যায়। এজন্যেই এ ধরনের র্যামকে স্ট্যাটিক র্যাম বা SRAM বলে থাকে। SRAM এর গতি ডির্যাম থেকে বেশি। সার্কিটে জটিলতার কারণে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় SRAM-এর ব্যবহার সীমিত। সাধারণত SRAM কে ক্যাশ মেমোরি হিসেবে ব্যবহার হয়।
ডাইনামিক র্যামের মতো স্ট্যাটিক র্যামকেও দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- সিনক্রোনাস ও অ্যাসিনক্রোসান SRAM । SRAM-এর অ্যাক্সেস সময় সাধারণত ৪ থেকে ১০ ন্যানোসেকেন্ড হয়ে থাকে।
স্ট্যাটিক ও ডাইনামিক র্যামের সুবিধা ও অসুবিধা কী?
সুবিধা | অসুবিধা |
---|---|
ক) সমান পরিসরের ডাইনামিক র্যামে স্ট্যাটিক র্যামের তুলনায় বেশি ডেটা সংরক্ষণ করা যায়। | ক) বারবার প্রোগ্রামিং এর জন্য ডাইনামিক র্যামে অতিরিক্ত বর্তনীর প্রয়োজন হয়। |
খ) স্ট্যাটিক র্যামের তুলনায় ডাইনামিক র্যামে শক্তির অপচয় কম হয়। | খ) সাধারণত স্ট্যাটিক র্যাম অপেক্ষা ডাইনামিক র্যাম থেকে তথ্য রিকভার ও সংরক্ষণে সময় বেশি লাগে । |
গ) ডাইনামিক র্যামে বিট সংরক্ষণের খরচ স্ট্যাটিক র্যামের তুলনায় কম । | গ) স্ট্যাটিক র্যামের তুলনায় ডাইনামিক র্যামের গতি কম। |
ভিডিও র্যাম (Video RAM or VRAM) বা ভির্যাম
ভিডিও র্যাম বা VRAM হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের DRAM যা ভিডিও কার্ডে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ধরনের DRAM-এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য দ্বৈত পোর্ট (Dual port) বা ইনপুট/আউটপুট মুখ আছে। DRAM থেকে ডিসপ্লে সিস্টেমে ধারাবহিকভাবে ডেটা পাঠানোর জন্য একটি পোর্ট ব্যবহৃত হয়। মনিটরের পর্দার প্রদর্শিত চিত্রকে এই পোর্টের মাধ্যমে অবিশ্রান্তভাবে হালনাগাদ (Refresh) করা হয়। আর দ্বিতীয় পোর্টটি সিপিইউ ও মেমোরির মাঝে ডেটা বিনিময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই দুটো পোর্টের মাঝে কোনো পারস্পরিক নির্ভরশীলতা নেই। অর্থাৎ সিপিইউ ও মেমোরির মাঝে ডেটা আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া মেমোরি থেকে ডিসপ্লে সিস্টেমে ডেটা স্থানান্তরের কাজে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি করে না। সাধারণ DRAM-এর পক্ষে এটি সম্ভব নয়। কারণ এক্ষেত্রে একই সঙ্গে ডেটা রিড ও রাইট সম্ভব নয়। এ কারণে ভিডিও কার্ডে সাধারণ DRAM-এর পরিবর্তে VRAM ব্যবহার করা হয়। VRAM অবশ্য অধিকতর ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।
সিনক্রোসান গ্রাফিক্স র্যাম (Synchronous Graphics RAM or SGRAM) বা এসজির্যাম
সিনক্রোনাস গ্রাফিক্স র্যাম বা SGRAM নামে আর এক ধরনের র্যাম আছে। VRAM-এর সঙ্গে এর প্রযুক্তিগত পার্থক্য হচ্ছে যে, এটি সিনক্রোনাস ডির্যামের (DRAM) উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স, মাল্টিমিডিয়া, লেজার প্রিন্টার ইত্যাদি কাজে এই প্রকার র্যাম ব্যবহার করা হয়। এটি ভির্যামের তুলনায় অধিক ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও উন্নত পারফরমেন্সের জন্য এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
খ. রিড অনলি মেমোরি- রম (Read Only Memory-ROM)
স্থায়ীভাবে ডেটা ও নির্দেশ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত অ-উদ্বায়ী অর্ধপরিবাহী মেমোরিকে রম বলে। তবে বর্তমানে এমন অনেক ধরনের রম তৈরি হয়েছে, যেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষিত ডেটা মুছে আবার নতুন ডেটা সংরক্ষণ করা যায়। সাধারণত অপরিবর্তনশীল ডেটা যেমন— বিভিন্ন কোণের জন্য সাইন, কোসাইন, ইত্যাদির মান এবং অপরিবর্তনশীল ডেটা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ROM ব্যবহার করা হয়।
রম (ROM) এর বৈশিষ্ট্য
১. সাধারণত রমে নতুন ডেটা লেখা হয় না; কিন্তু যখনই প্রয়োজন তখনই রম থেকে ডেটা পড়ে নেয়া যায়।
২. রম উদ্বায়ী বা অস্থায়ী নয়। বিদ্যুৎ প্রবাহ চলে গেলে রমে সংরক্ষিত ডেটা মুছে যায় না।
৩. সচরাচর পরিবর্তনযোগ্য ডেটা রমে সংরক্ষণ করা হয় না।
৪. সাধারণত রমে (ROM) একবার প্রোগ্রাম করা হলে তাতে আর কোন ধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে ডেটা মুছে পুনঃপুন প্রোগ্রাম করা যায় এমন রমও রয়েছে।
৫. রমকে সাধারণত ফ্যাক্টরিতেই প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে।
রম বিভিন্ন ধরনের হয়, সেগুলো হচ্ছে—
ক. এমরম (MROM Mask Programmable ROM)
খ. পিরম (PROM Programmable ROM)
গ. ইপিরম (EPROM- Erasable Programmable ROM)
ঘ. ইইপিরম (EEPROM Electrically Erasable Programmable ROM)
ক. এমরম (MROM- Mask Programmable Read Only Memory )
MROM-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো-
১. ফটোগ্রাফিক মাস্ক ব্যবহার করে প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। সাধারণত ব্যবহাকারীর চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাক্টরিতেই MROM প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে।
২. MROM বেশ ব্যয় বহুল। তবে একই ধরনের প্রোগ্রাম সম্বলিত অনেক MROM-এর ব্যবহার অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
৩. একবার প্রোগ্রাম করা হলে MROM কে পুনঃপুন প্রোগ্রাম করা যায় না।
খ. পিরম (PROM- Programmable Read Only Memory )
PROM-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো-
১. প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজেই PROM-এ ডেটা সংরক্ষণ করতে পারেন।
২. PROM-কে একবার প্রোগ্রাম করা হলে পুনঃপুন প্রোগ্রামের কোন সুযোগ থাকে না
গ. ইপিরম (EPROM - Erasable Programmable Read Only Memory )
EPROM-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো—
১. প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজেই EPROM-এ ডেটা সংরক্ষণ করতে পারেন। সংরক্ষিত ডেটা মুছে EPROM-কে পুনঃপুন প্রোগ্রাম করা সম্ভব।
২. EPROM উদ্বায়ী নয় অর্থাৎ প্রোগ্রামকৃত ডেটা কোনো অবস্থায় মুছে যায় না।
৩. EPROM তৈরিতে সাধারণত ফিল্ড এফেক্ট ট্রানজিস্টর (FET-Field Effect Transistor) ব্যবহার করা হয়।
8. EPROM প্রোগ্রামের জন্য সাধারণত বিশেষ ধরনের বর্তনী প্রয়োজন হয়।
৫. সাধারণত অতি বেগুনী রশ্মি ব্যবহারের মাধ্যমে EPROM-এ সংরক্ষিত ডেটা মুছে দেয়া হয়
ঘ. ইইপিরম (EEPROM - Electrically Erasable Programmable Read Only Memory )
EEPROM-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো-
১. ব্যবহারকারী প্রোগ্রামের মাধ্যমে EEPROM-এ ডেটা সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে সংরক্ষিত ডেটা ইলেকট্রিক্যাল পদ্ধতিতে মুছে পুনঃপুন প্রোগ্রাম করা যায়।
২. প্রোগ্রাম করার সময় EEPROM-কে সার্কিট বোর্ড বা সকেট থেকে খুলতে হয় না।
৩. EEPROM-এ ডেটা সংরক্ষণ করতে এবং ডেটা মুছতে EPROM-এর তুলনায় অনেক কম সময় লাগে।